বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
ফের শোনা যাবে লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের জেরে ২৪ মার্চ থেকে বন্ধ ছিল বাংলা সিনেমার শুটিং। টানা আড়াই মাস কোনও সিনেমার শুটিং যেমন হয়নি, তেমনই মুক্তিও পায়নি কোনও সিনেমা। শুটিং হয়নি কোনও সিরিয়াল বা টেলিফিল্মেরও। টিভিতে দেখানো হয়েছে রিপিট টেলিকাস্ট। অনেকের বক্তব্য, এর ফলে বাংলা সিনেমার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে কয়েকশো কোটি টাকার মতো। বিখ্যাত শিল্পী ও পরিচালকরা নিজেদের ব্যক্তিগত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারলেও সাধারণ শিল্পী ও কলাকুশলীরা ভয়ঙ্কর বিপাকে পড়ে গিয়েছিলেন। অনেকের গ্রাসাচ্ছদনেই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এবার সেই সমস্যা কাটতে চলেছে বলে ধারণা চলচ্চিত্র মহলের।
বাংলা সিনেমার শুটিং কবে শুরু করা যায়, সেই বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল সিনেমা জগতের বিভিন্ন সংগঠন। বৈঠকে ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ছাড়াও আর্টিস্ট ফোরাম, ইম্পা, ফেডারেশন এবং প্রোডিউসার্স গিল্ডের কর্তারা। বৈঠকটি হয়েছিল টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাংলা সিনেমা ও সিরিয়ালের শুটিং শুরু হয়ে যাবে আগামী ১০ জুন বুধবার থেকে।
বৈঠকের পর রাজ্য সরকারের তরফে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘লকডাউনের জন্য দু’মাসেরও বেশি সময় শুটিং বন্ধ ছিল। অনেক শিল্পী ও কলাকুশলীরা খুব সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। আজকের আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে ১০ জুন থেকে শুটিং শুরু হবে। তবে সমস্ত সুরক্ষা বিধি মেনেই শুটিং হবে।’ যদিও এই সুরক্ষা বিধির জেরে শুটিং কতখানি সাবলীল ভাবে হবে, তা নিয়ে সন্দিহান সিনেমা ও সিরিয়ালের নির্মাতা ও নির্দেশকরা।
সুরক্ষা বিধিগুলির মধ্যে রয়েছে ১০ বছরের কম শিশুশিল্পীরা শুটিংয়ে অংশ নিতে পারবে না। খুব প্রয়োজন না পড়লে ৬৫ বছরের বেশি বয়সের কোনও শিল্পীকেও শুটিংয়ে ডাকা যাবে না। যে সব কলাকুশলী শুটিংয়ে অংশ নেবেন, তাঁদের জন্য ২৫ লক্ষ টাকার বিমা করতে হবে। এই টাকার অর্ধেক দেবে সংশ্লিষ্ট চ্যানেল, প্রযোজনা সংস্থা দেবে ৪০ শতাংশ এবং অবশিষ্ট ১০ শতাংশ দেবে আর্টিস্ট ফোরাম। ঘনিষ্ঠ দৃশ্যেও কোনও শিল্পী অভিনয় করতে পারবেন না। শিল্পীদের বাড়ি থেকেই কস্টিউম নিয়ে আসতে হবে। শিল্পীদের মেকআপ কিটও তাঁদের নিজেদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে হবে।
শিশুশিল্পীদের অভিনয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে অভিনেত্রী জুন মালিয়া জানিয়েছেন, শিশুদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তা ছাড়া বাড়িতে যে সব শিশু বসে রয়েছে, তারা সিনেমা বা টিভির পর্দায় ছোটদের অভিনয় করতে দেখলে কষ্ট পাবে। তাই শিশুশিল্পীদের নিয়ে অভিনয় করানোর ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করতে হয়েছে। তবে অনেক অভিনেতা ও অভিনেত্রীই মন্তব্য করেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এত বিধিনিষেধের হয়তো প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সে–সব মেনে সিনেমার শুটিং কী করে স্বাভাবিক ভাবে করা যাবে, তা নিয়ে সংশয়ও কম নেই।
তবে বৈঠকের পর মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে বেশ হাসিখুশিই দেখিয়েছে। তিনি হাসতে হাসতে বলেছেন, ‘আশা করছি ১৫ জুনের পর থেকে টিভির দর্শকদের আর রিপিট টেলিকাস্ট দেখতে হবে না।’